মো. আব্দুসসালাম,নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর সদর উপজেলার ফুলসর গ্রামে ৫০ বছর আগে ৪০ বিঘা জমি কিনে বসতি স্থাপন করে ৩৫ পরিবার এখন হতে যাচ্ছেন গৃহহীন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণের ফলে ঘরের মালিকরা হবেন গৃহহীন,গৃহহীনরা হবেন ঘরের মালিক। গ্রামের অন্ততঃ ৩৫টি পরিবার ৫০ বছর আগে ৪০ বিঘা জমি কিনে নিয়ে বসতি শুরু করেছিলেন। বিক্রেতার প্রতারণায় এই জমি খাসখতিয়ানভূক্ত হয়েছে। খাস জমি হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করছে।
ঘটনাটি জানাতে শনিবার দুপুরে ফুলসর গ্রামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ওই গ্রামের ৩০ জন বাসিন্দা। এতে বক্তব্য রাখেন ফুলসর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান আলী মিয়া, শরবানু বেওয়া,লিয়াকত হোসেন,নজরুল ইসলাম,আনোয়ার হোসেন,অছির উদ্দিন ও ময়েন উদ্দিন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান আলী মিয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন,ফুলসর মৌজার ৬ নম্বর খতিয়ানের প্রায় ৪০ বিঘা জমির হাল খতিয়ানের (আরএস রেকর্ড) মালিক ছিলেন অর্পণা দেবী। তিনি স্বত্ববান থাকাকালে উক্ত জমি আব্দুল লতিফ,আব্দুল হাই ও আব্দুর রউফের কাছে বিক্রি করেন। তাঁদের কাছ থেকে খরিদ করে ৩৫টি পরিবার এই গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস ও চাষাবাদ শুরু করেন। গত ৫০ বছর ধরে তাঁরা এসব জমি ভোগদখল করছেন। এসব জমিতে বসবাসের পাকা ঘরবাড়ি ও ফলজ বাগান করেছেন অনেকেই।
গ্রামবাসীরা জানান সম্প্রতি ভূমি অফিসের লোকজন এসে তাঁদেরকে জানায়,এসব জমি ১৯৭৮ সালে অর্পণা দেবীর স্বামী কালিচন্দ্র চক্রবর্তী বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ভূমি অফিস ওই সময় এসব জমি খাস খতিয়ানভূক্ত করেছে। তাই তাঁদেরকে এখন এসব জমি ছেড়ে দিতে হবে। গত বৃহষ্পতিবার হঠাৎ করে সরকারি লোকজন এসব জমিতে থাকা আমবাগান ও ফসল কেটে পাকা ঘরবাড়ির নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এখন তাঁরা ভিটেমাটি হারাতে বসেছেন। তাঁরা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেবেন তা নিয়ে দুঃচিন্তায় দিনাতিপাত করছেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হাবিব বলেন, রাষ্ট্রপতির ৯৮/১৯৭২ নম্বর আদেশমুলে একই নামের ১০০ বিঘার অতিরিক্ত জমি রাষ্ট্রের অনুকুলে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয় । এই নির্দেশ মোতাবেক ফুলসর গ্রামের অর্পণা দেবীর স্বামী কালিচন্দ্র চক্রবর্তী তাঁর পরিবারের ১০০ বিঘার অতিরিক্ত ৩৬ একর জমি রাষ্ট্রের অনুকুলে ফিরিয়ে দেন। সরকার ১৯৭৮ সালের ২২ জুলাই ওই জমি সরকারের নামে খাস খতিয়ানভূক্ত করে। এখন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সরকার এসব জমিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন,প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কারো অন্যায় আবদার মানা হবে না। তবে মানবিক কারণে যে ৩৫টি পরিবারের বাড়ি খাসজমিতে আছে, তাঁদের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।
Comments