নাটোরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ দামে সার বিক্রি, দিশেহারা কৃষক


মো. আব্দুস সালাম, নাটোর প্রতিনিধি  
 নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃষকদের ঠকিয়ে, কৃত্রিম সংকট তৈরী করে, সরকারী নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে, সরকার প্রদত্ত রাসায়নিক সার অধিক মূলে বিক্রয় করছেন ডিলার, সাবডিলার ও নন কার্ডধারী সার ব্যবসায়ীরা। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। এতে চলতি মওসুমে ধান চাষে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সুত্রে জানা যায়, "সরকার প্রদত্ত সারের নির্ধারিত মূল্য প্রতি বস্তা (৫০) কেজি ইউরিয়া ১১০০ টাকা, টিএসপি ১১০০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা ও এমওপি ৭৫০টাকা।" অথচ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সার ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে বিক্রয় করছে। প্রয়োজনের তাগিদে উচ্চ দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। আবাদ ফসল করতে হতাশায় ভুগছেন কৃষকেরা। ভেঙ্গে পড়ছে তাদেও মনোবল। এ হেন দুর্দশায় মনিটরিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ ডিলার এবং সাবডিলাদের স্টক রেজিস্টার খাতায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিংবা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তার মন্তব্য বা স্বাক্ষর নেই।  

উপজেলার হারোয়া গ্রামের সাবদুল আলী সহ কয়েকজন কৃষক বলেন, "কৃষকরা প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১৩০০/১৪০০ টাকায়, টিএসপি ১৭০০/১৮০০টাকায়, ডিএপি ১৭০০/১৮০০ টাকায়, ও এমওপি ১৩০০/১৪০০ টাকায় ক্রয় করছে। আমরাও অনুরুপ দামে ক্রয় করেছি।" তিরাইল এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, "আমি কয়েক বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি। কোন ডিলার বা সাবডিলারের ঘরে সার পাইনি। তবে খুচরা বিক্রেতার দোকানে সরকারী রেটের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ দামে সার কিনেছি। এতে কৃষক মরে শেষ হয়ে যাবে।"তিরাইল গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম হোসেনও অনুরুপ কথা বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নন কার্ডধারী কয়েক জন সার ব্যবসায়ী জানিয়েছেন যে ডিলার ও সাবডিলারের কাছে আমাদের রশিদ বিহীন সরকারী দামের চেয়ে অধিক মূল্যে সার ক্রয় করে আনতে হয়। আমরা সেগুলো কিছু লাভে কৃষকের কাছে বিক্রয় করি। তাদের নাম প্রকাশ করলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আমাদের আর তারা সার দিবে না।  
উপজেলা সাবডিলার সভাপতি আকরাম হোসেন জানান, উপজেলায় ৭ ইউনিয়নে ১ জন করে ৭ জন এবং ২ পৌরতে ২ জন করে ৪ জন মোট ১১ জন বিসিআইসির মূল ডিলার রয়েছেন। প্রতি ইউনিয়নের বিসিআইসির মূল ডিলারের প্রাপ্ত সারের ৫০% সার ৯ ভাগে ভাগ করে তার ১ ভাগ ১ জন সাবডিলার পেয়ে থাকি। যেটা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। কোন ইউনিয়নে ৯ জনের পরিবর্তে ৬/৭/৮ জন সাব ডিলার থাকা সত্বেও ৯ ভাগের ১ ভাগ সার আমরা পেয়ে থাকি এবং  সরকারী বিধি অনুসারে বিক্রি করে থাকি। অবশিষ্ট ৫০%  সার বিসিআইসির মূল ডিলার নিজ দোকানে কৃষকের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সহ মেমো ও রেজিস্টারের মাধ্যমে বিক্রয়ের নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ করে না। পরবর্তীতে মূল ডিলাররা বাকি সার নন কার্ডধারীদের কাছে গোপনে বিনা রশিদে বেশী দামে বিক্রয় করে। এজন্যই খোলা বাজারে নন কার্ডধারীদের কাছে সার থাকে এবং তারা  বেশী দামে সার ক্রয় করে।  

জোয়াড়ী ইউনিয়নের বিসিআইসির মূল ডিলার উর্মি টেডার্সের মালিক অজয় কুমার শাহ জানান, আমার অধীনে ৫ জন সাবডিলার আছে। তারমধ্যে ৩ জন সুনির্দিষ্ট জায়গায় আছে, অপর ২ জন নাই। ১জনের থাকার কথা কুমরুলে অপর জনের কায়েমকোলা কিন্তু তারা ২ জনেই আহমেদপুর বাজারে ব্যবসা করছে। সরকারী বিধি মোতাবেক রেজিস্টার খাতায় স্বাক্ষর করে সার নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তারা স্বাক্ষর করে না। ভ্যান চালকের মাধ্যমে চিরকুট ও টাকা পাঠিয়ে সার নেয়। যেহেতু বাজারে থাকি পরিচিত কিছু নন  কার্ডধারী সার ব্যবসায়ী ভ্যান ও টাকা পাঠালে সার না দিয়ে পারি না, তাই ২/৪ বস্তা দিয়ে থাকি। এটা কৃষি অফিসারেরাও জানেন। কিন্তু তাদের দোকান অবৈধ।
কৃষক প্রতিনিধি আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, আমাদের সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। আমাদের দেশে সারের কোন অভাব নেই। কিন্তু বর্তমানে কৃষকরা ডিলার বা সাবডিলারের  কাছে সার কিনতে যাচ্ছে তথন কৃষকরা সরকারী রেটে সার পাচ্ছে না। কৃষকরা বাজারে যখন সার কিনতে যাচ্ছে সেখানে এতো উর্ধ মূল্যে কিনতে হচ্ছে যা হতাশাজনক।
  এ ব্যাপারে বড়াইগ্রামের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, সারের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য পৌর ও ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে উপসহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা সর্বক্ষণ বাজার মনিটরিং করছে। যদি কেহ মজুদ ও বেশী দামে বিক্রি করে তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।

bnewso

Comments